১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে, হিন্দুদের জন্য ভারত এবং মুসলিমদের জন্য পাকিস্তান ভূখণ্ডের সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি থেকেই মুসলিমদের জন্য হওয়া বাংলাদেশ ভূখণ্ড থেকে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে হিন্দু জনসংখ্যা। অন্যদিকে হিন্দুদের ভারতে দিন দিন বেড়েই চলছে মুসলিম জনসংখ্যা (declining hindu population bangladesh)।
বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস হওয়ার পিছনে প্রথম কারণ হলো দেশত্যাগ এবং দ্বিতীয় কারণ হলো হিন্দুদের জন্মহার কম।

বাংলাদেশের হিন্দুদের দেশত্যাগ
১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের পর থেকে আজ ২০২৫ সালে এসেও বাংলাদেশের হিন্দুদের দেশত্যাগ চলমান রয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কারণে বাংলাদেশের হিন্দুরা দেশ ত্যাগ করেছে। ১৯৫০ সালে ঢাকা-বরিশাল হিন্দু গণহত্যার পর হিন্দুরা দেশ ত্যাগ করেছে। ১৯৬৪ সালে হজরতবাল মসজিদ থেকে মুহাম্মদের চুল চুরির মিথ্যা ঘটনায় পূর্বপাকিস্তানের(বাংলাদেশ) হিন্দুদের ওপর হামলা হলে দেশ ত্যাগ করে হিন্দুরা। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং এই সময় জারি করা ‘‘শত্রু সম্পত্তি আইনের’’ কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা তাদের জমি ও সম্পত্তি হারানোর ঝুঁকিতে পড়ে অনেকে দেশত্যাগ করেছে। তারপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও প্রায় ১ কোটির ওপরে হিন্দু দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৭৫ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবকে হত্যার পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে রাজনৈতিক অস্থিরতায় কিছু হিন্দু নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশত্যাগ করেছে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করার পর নিরাপত্তাহীনতা এবং অর্পিত সম্পত্তি আইন কার্যকর থাকায় হিন্দুদের ভূমি দখলের সুযোগ করে দিয়েছিল, যার ফলে অনেকে হিন্দু দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বিশেষ করে যাঁরা গ্রামে বসবাস করতেন সেইসব হিন্দুরা বেশি দেশ ত্যাগ করেছে। ১৯৯২ সালে অয্যোধা রাম মন্দির পুনরুদ্ধারকেকে কেন্দ্র করে, হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে-মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ভূমি দখল এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে সারা বাংলাদেশের ব্যাপক পরিমাণে হিন্দু দেশত্যাগ করেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর যে নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছে এতেও অনেক হিন্দু দেশ ত্যাগ করেছে।
১৯৪৭, ১৯৫০, ১৯৬৪, ১৯৬৫, ১৯৭১, ১৯৭৫, ১৯৯২ এবং ২০০১ সাল এই সময়গুলোতে বাংলাদেশের হিন্দুরা ব্যাপক পরিমাণে দেশত্যাগ করেছে। এছাড়াও অন্য সময়গুলোতে সামান্য পরিমাণে দেশত্যাগ করেই চলছে যা বর্তমান ২০২৫ সালেও চলমান রয়েছে। দেখা গেছে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যাপক পরিমাণে হিন্দু দেশ ত্যাগ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ভারত সরকার বর্ডার বন্ধ করে দেওয়ায় হিন্দুরা দেশ ত্যাগ করে ভারতে প্রবেশ করতে পারে নাই। কিন্তু তারপরেও অল্প সংখ্যক হিন্দু রাতের আধারে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, আদমশুমারি ও গৃহগণনার তথ্য অনুযায়ী – ১৯৫১ সালে ২২.০ শতাংশ, ১৯৬১ সালে ১৮.৫ শতাংশ, ১৯৭৪ সালে ১৩.৫ শতাংশ, ১৯৮১ সালে ১২.১ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ১০.৫ শতাংশ, ২০০১ সালে ৯.২ শতাংশ, ২০১১ সালে ৮.৫ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৭.৯৫ শতাংশ হিন্দু রয়েছে। যা ক্রমানয়ে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যার হার হ্রাস পাচ্ছে।
বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারকাতের ‘বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৫ দশকে মোট ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বি মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬১২ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বি মানুষ নিরুদ্দিষ্ট বা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আর প্রতিদিন দেশ ছেড়েছেন গড়ে ৬৩২ জন হিন্দু দেশত্যাগ করেছেন।
গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই নিরুদ্দেশ বা দেশত্যাগের প্রক্রিয়ার প্রবণতা বজায় থাকলে আগামী দু’তিন দশক পরে বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কোনও মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্মহার (declining hindu population bangladesh)
বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্মহার নিয়ে তেমন কোন পরিসংখ্যান না হলেও আমরা সরাসরি দেখতে পাই হিন্দুদের মধ্যে কি পরিমাণে জন্মহার কম। যেখান মুসলিম পরিবারগুলো চার সন্তানের অধিক বাচ্ছা জন্ম দিচ্ছে, সেখানে হিন্দু পরিবার গুলো ১ সন্তান বা বেশি হলে দুটি সন্তান জন্ম দিচ্ছে। ঠিক এই কারণে বাংলাদেশের হিন্দুদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি না পাওয়ার একটা অন্যতম কারণ হলো এই জন্মহার।
ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে প্রথম কারণ হলো মুসলিম অনুপ্রবেশ এবং দ্বিতীয় কারণ হলো মুসলিমদের জন্মহার বৃদ্ধি।
Raja Bikramjit Ghosh The Sadgop Ruler Who Resisted the Delhi Sultanate
ভারতে মুসলিম অনুপ্রবেশ:
মুসলিম অনুপ্রবেশ ভারতের একটি জাতীয় সমস্যা। এই মুসলাম অনুপ্রবেশকারীরা আসছে ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর অনুপ্রবেশের কারণে ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়লো তিনগুন। আর বাংলাদেশে এবং পাকিস্তানে যা হিন্দু ছিল তা নিধনে এবং বিতাড়নে প্রায় শেষ। এই অনুপ্রেবেশকারীদের চাপে পশ্চিমবঙ্গের নাভিশ্বাস উঠেছে। সারা ভারতে তৈরি হয়েছে অসংখ্য পাকিস্তানী পকেট। সেগুলিকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জেহাদীদের ঘাঁটি বলা চলে। অনুপ্রবেশ এই সমস্যার স্রষ্টা এবং পালক রাজনৈতিক দলগুলি। নিশ্চিত ভোট ব্যাংক মনে করে তারা এদের রেশনকার্ড করে দেয়, ভোটার লিস্টে নাম তুলে দেয়। স্থায়ী নাগরিক হয়ে যায়। আরও অনুপ্রবেশকারী আসার নিশ্চিত ঘাঁটি হয়ে যায়।
ভারতের প্রত্যেকটি দায়িত্বশীল সংবাদপত্র, সরকারের ইনটেলিজেন্স বিভাগ জানাচ্ছে ব্যাপক অনুপ্রবেশের সংবাদ। অনুপ্রবেশ নিয়ে সাংবাদিকরা লিখেছেন, “শুধু বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে প্রত্যহ ৫০০ করে বাংলাদেশী মুসলমান আসছে বহু বছর ধরে” “হাজার হাজার অনুপ্রবেশকারী নদীয়ার কৃষ্ণনগরে একটা গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করে ফেলেছে” “যে হকাররা কলকাতায় আইন শৃঙ্খলা সমস্যার সৃষ্টি করে ফেলেছে, এরা সবাই বাংলাদেশ এবং বিহার থেকে আসা মুসলমান”।
The ‘Joy Bangla’ Deception: BANGLADESHI ISLAMISM UNDER THE FACADE OF BENGALI NATIONALISM
১৯৮২ সালে ব্যারিষ্টার নীহারেন্দু দত্ত মজুমদারের সভাপতিত্ত্বে গঠিত হয়েছিল “সীমান্ত শান্তি ও সুরক্ষা সমিতি” সেই সময়ে তাদের তথ্যে অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ৫২লক্ষ অনুপ্রবেশকারী মুসলমান এসেছে। যা ৫০ টি বিধানসভার আসনকে এরা নিয়ন্ত্রণ করবে। ১৫০ টি বিধানসভা কেন্দ্রকে এরা প্রভাবিত করবে।
১৯৮৪ সালের ১৪ই জানুয়ারী, ভারতের ৪টি মুসলিম সংস্থা দিল্লীতে জনসভায় দাবী করেছিল ভারতে ৬০লক্ষ বাংলাদেশী মুসলমান এসেছে, এদের বিতাড়ন করা চলবে না। এদের অবিলম্বে ভারতের নাগরিকত্ব দিতে হবে। ১৯৯০ সালে দেখা গেলো কলকাতায় হাজার হাজার মুসলমান অনুপ্রেবেশকারী মিছিল করে চলে গেলো প্রেস ক্লাবে। তারা আমরা অনুপ্রেবেশকারী, আমরা বাংলাদেশে থেকে এসেছি। আমাদের অবিলম্বে ভারতের নাগরিকত্ব দিতে হবে।
২০২৪ সালে বিএসএফ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করতে গিয়ে যত বাংলাদেশি নাগরিক ধরা পড়েছেন, তাদের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
এই অনুপ্রবেশকারী মুসলিমরা বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার পাঁচ মাইল নয় বহু জায়গায় দশ মাইল পর্যন্ত মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা তৈরি হয়েছে। তারা এখানে ডাকাতি করছে, হিন্দু নারী হরণ করছে; আর আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশে। নদীয়া ও ২৪ পরগনা জেলায় হিন্দুরা নিরাপত্তার অভাবে জমি বাড়ি ফেলে চলে যাচ্ছে অন্যত্র। এই অনুপ্রবেশের কারণেই ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মুসলিম জনসংখ্যা।
ভারতে মুসলিমদের জন্মহার:
মুসলিমদের ধর্ম অনুযায়ী একজন মুসলিম পুরুষের চারটা বিয়ে করা হালাল(বৈধ) এবং একাধিক সন্তানে তারা বিশ্বাসী, কম করে হলেও তার ৪টা সন্তান জন্মদিবেই। এতে দেখা যায় এক এক জন মুসলিম পুরুষের সন্তান সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৫ থেকে ২০তে। অথচ অন্য দিকে এক এক জন হিন্দু পুরুষের সন্তান সংখ্যা ২/১টা বেশি হলে ৩টা সন্তান হতে পারে। এর ফলেই ভারতে মুসলিমদের জনসংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।
এই ধারা অব্যহত থাকলে একদিন বাংলাদেশে আরো কোন হিন্দুকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে ভারতে এইভাবে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে আবারও তারা ভারত ভাগের দাবি তুলবে, তারা দাবি তুলবে শরীয় আইন কার্যকর করার। আবারও ভারতে হবে হিন্দু গণহত্যা।
কিশোর চন্দ্র দাস