Saturday, October 4, 2025
HomeArticlesResearch & ScholarlyBanglar Loksanskriti Choray Kak Drighanchu বাংলার লোকসংস্কৃতি ছড়ায় কাক-দ্রিঘাংচু

Banglar Loksanskriti Choray Kak Drighanchu বাংলার লোকসংস্কৃতি ছড়ায় কাক-দ্রিঘাংচু

‘ঝাড়ুদার পাখি’ বলে সমীহ করা হলেও, কাক (Banglar Loksanskriti Choray Kak Drighanchu) তার সর্বভুক হওয়ার কারণে লোকসমাজে এক জঘন্য, নিঘিন্নে পাখি রূপেই উপস্থাপিত। খাবার তালিকাতে পচা-পোড়া, আমিষ-নিরামিষ, খাদ্য-অখাদ্য কিছুই বাদ যায় না। তার ‘গু খাওয়া’ স্বভাবের জন্যে একটি লৌকিক ছড়ায় পাই –
“বেত কাটে আড়াই বুড়ি
বেতের বান্দন গোটা গোটা
মামুগো ঘরের কোণায় চল্লিশ কান কোটা
কোটার পর কোটা
তার পরে বসে রইচে গু খাওয়া এক বেটা।”
এখানে গাছের মগডালে কাকের বাসার আলুথালু, অগোছালো অবস্থাই প্রতীয়মান হয়েছে। কাঠি, কঞ্চির টুকরো সংগ্রহ করে গাছের সুউচ্চ ডালে ‘কুৎসিত বাসা’ বেঁধে ডিম পেড়ে ‘তা’ দেবার জন্য বসে আছে সে।

Banglar Loksanskriti Gangatikuri Gramer Shiv Gajon বাংলার লোকসংস্কৃতি গঙ্গাটিকুড়ি গ্রামের শিব গাজন

বরিশালের নবান্নের ছড়ায় দেখি ‘নবান্নের বলি’ বা প্রসাদ গ্রহণের জন্য পশুপাখিকে আহ্বান জানানো হয়। তাতে ঘনকালো, গলা-ভাঙ্গা দাঁড়কাককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, পাতিকাক অবহেলিত থাকে। কারণ বোধহয় পাতিকাকের দুষ্টমি, অন্য পাখির পিছনে লাগা, অকারণে ‘কা-কা’ করে বাড়ি মাথায় করা। আর দাঁড়কাকের কালোর মধ্যেই আছে তার গাম্ভীর্যের রূপ।
“কো কো কো,
আমাগো বাড়ী শুভ নবান্ন
শুভ নবান্ন খাবা
কাক বলি লবা।
পাতি কাউয়া লাথি খায়,
দাঁড় কাউয়া কলা খায়,
কো কো কো,
মোরগো বাড়ী শুভ নবান্ন।”

Banglar Loksanskriti Choray Kak Drighanchu
Banglar Loksanskriti Choray Kak Drighanchu

মাঘ মাসের কাকভোরে মাঘ মণ্ডলের ব্রতে অংশ নেয় বাংলার ব্রতিনী নারী; জড়তা-জড়িমা ত্যাগ করে খুব ভোরে স্নানে যায় তারা, আর ছড়া আবৃত্তি করে। ফরিদপুর থেকে সংগৃহীত একটি ছড়া এইরকম —
“যে জল ছোঁয় না লো কাগে আর বগে
সে জল ছুঁই মোরা দূর্বার আগে।
দূর্বা দূর্বা সরস্বতী নড়ে আর চড়ে,
নড়িয়া চড়িয়া কি বর মাগে?
সাত সতিন পায়ে পড়ে।”
কাক জেগে ওঠার আগেই এই কৃত্য। জলের পাড়ে তখনও কানি-বক বা Pond heron (কোচ বক) মাছ খাওয়ার জন্য বসে নি। এ কাক ডাকার আগের ভোরে শীতের স্নান। এও কি সাধু সন্ন্যাসীদের মকর স্নানের চাইতে কম কিছু! জঘন্য, নিঘিন্নে কাকও যেন না দেখে ফেলে ভোরের স্নান।

সারাদিন কাকের দুষ্টামির সঙ্গেই, কাকের সামীপ্যেই বাংলার ঘর-গৃহস্থালি। তারপর নিশা নামে “শ্রেণীহারা একা ক্লান্ত কাকের পাখে”। আসে রাত, পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ে……

কল্যাণ চক্রবর্তী

ড. কল্যাণ চক্রবর্তীর বই প্রকাশ

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments