আমি লাবণ্যপ্রভা মজুমদার; পিতার নাম শ্রী চন্দ্রমাধব পণ্ডিত। আমার বয়স আঠারো। দাঙ্গার সময় আমার দুই ভাই- বিলাসচন্দ্র মজুমদার এবং যোগেন্দ্রনাথ মজুমদার খুন হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দিন কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো ছিল। তার ঠিক দুদিন পরেই অনেক মুসলমান আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে লুটপাট করা শুরু করে। আমরা তখন বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পাটকাঠি কেরোসিনে ভিজিয়ে আমাদের বাড়িঘরে আগুন দিতে শুরু করে লুটেরার দল। তখন আমার বৌদি ননীবালা এবং আমি ছুটে গিয়ে বাড়ির পিছনের জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ি। সব বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ার পর, কালা মিয়া আমায় দেখে ফেলে চিৎকার করে ডাকে, ” মোহাম্মদ, আতার আলী, আমি একটা মেয়েকে পেয়েছি।” এরপর ডাক শুনে তারাও আসে এবং কালা মিয়ার বাড়িতে আমায় নিয়ে যায়৷ মোহাম্মদ এবং আতার আলী-র বাড়ি আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল।
পথিমধ্যে আমি অনেক মুসলমান দেখেছিলাম। আমি কোন পরিবারের মেয়ে তা জানার পর তারা বলে যে, আমাকে ছাড়া যাবে না। আতার আলী এবং মোহাম্মদ আমার হাত ধরে রেখেছিল। কালা মিয়া আমার পিছনে। সে আমায় পিছন থেকে ধাক্কা দেয় এবং আমি নীচে পড়ে যাই। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে কাঁদছিলাম। বাড়ির মুসলিম মহিলারা আমার দুর্দশা দেখে হাসছিল। এরপর তিনজন মিলে আমায় একটি ঘরে নিয়ে যায়। মোহাম্মদ এবং আতার আলী বেরিয়ে যাওয়ার আগে তারা আমার ব্লাউজ ছিঁড়ে ফেলে এবং আমার সব কাপড়চোপড় নিয়ে গিয়ে আমায় নগ্ন করে রাখে। আমায় জোর করে শুইয়ে রেখে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। মুখ বুজে সব অপমান সহ্য করা ছাড়া, আমার আর কোন উপায় ছিল না।
এরপর আসে মোহাম্মদ, আতার আলী দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। আতার আলী আমার স্তনে হাত রেখে আমায় নির্যাতন করা শুরু করে। মাঝরাতে আতার আলী এবং কালা মিয়া আমায় আবারও ধর্ষণ করে। সারাদিন ধরে ওরা আমায় খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু আমি কোন খাবার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাই। এরপর বিকালবেলায়, আমাকে ওরা আমাদের পোড়া বসতবাড়ির পূর্ব দিকে ফেলে দিয়ে আসে।
শ্রীমতী লাবণ্যপ্রভা মজুমদার
১০/ ০১/ ১৯৪৭
মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশে অধ্যাপক নির্মল কুমার বসু ভুক্তভোগীর এই বয়ানটি নিয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র: সাতচল্লিশের ডায়েরি, নির্মল কুমার বসু